তেরখাদা উপজেলার ধানখালী আশ্রয়ণ প্রকল্পের যুবক সাব্বির হোসেন ভূঁইয়া (২৪) অপহরণের পর নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ঢাকায় নেওয়া হয় উন্নত চিকিৎসার জন্য। চিকিৎসকদের চেষ্টায় প্রাণে বেঁচে গেলেও শেষ রক্ষা হয়নি-বাঁচানো যায়নি তার বাম পা।চিকিৎসকরা বাধ্য হয়ে পা কেটে ফেলেন। এখন স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে গেছেন সাব্বির।
ধানখালী আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১ নম্বর ব্লকের ২ নম্বর ঘরের বাসিন্দা সাব্বির জীবিকা নির্বাহ করতেন হোটেলকর্মী হিসেবে। খুলনার রেলিগেট এলাকার ‘লেকভিউ হোটেল’-এ দীর্ঘদিন কাজ করেছেন তিনি। তার বাবা শরিফুল ভূঁইয়া একজন ভ্যানচালক। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন সাব্বির।
পরিবার ও স্থানীয়দের অভিযোগ, কিছুদিন আগে সাব্বিরের স্ত্রী ঋতু বেগম হোটেলে গিয়ে স্বামীর কাছে খরচের টাকা চাইতে গেলে হোটেল মালিকের ভাগ্নে রাতুল তাকে নিয়ে আপত্তিকর প্রস্তাব দেয়। এ ঘটনায় সাব্বিরের সঙ্গে রাতুলের কথা কাটাকাটি হয়। পরে ক্ষুব্ধ হয়ে হোটেলের চাকরি ছেড়ে গ্রামের বাড়ি ফিরে আসেন তিনি।
গত ১৮ জুলাই সন্ধ্যায় ধানখালী ব্রিজের ওপর থেকে মুখ চেপে ধরে মোটরসাইকেলে তুলে নেওয়া হয় সাব্বিরকে। পরিবারের অভিযোগ, তাকে খুলনায় নিয়ে যান ধানখালী গ্রামের ফিরোজ শেখের ছেলে রাসেল শেখ, দাউদ মোল্লার ছেলে সাব্বির মোল্লাসহ আরও কয়েকজন।
পরে খুলনার কালিবাড়ী এলাকার একটি ইটভাটায় নিয়ে গিয়ে হাত-পা ও মুখ বেঁধে বেধড়ক মারধর করা হয়। একপর্যায়ে তার বাম পায়ে গুলি করে নির্যাতনকারীরা। পরে ‘এক্সিডেন্ট হয়েছে’ বলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় তারা।
দুই দিন পর পরিবারের সদস্যরা খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে সাব্বিরকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় পান। সেখান থেকে দ্রুত ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। দীর্ঘ চিকিৎসার পর অবশেষে তার বাম পা কেটে ফেলতে বাধ্য হন চিকিৎসকরা।
সাব্বিরের বাবা শরিফুল ভূঁইয়া বলেন, “ছেলের যা অবস্থা হয়েছে, তাতে চোখে ঘুম নেই। সংসার চলত ওর উপার্জনে। এখন আমরা দিশেহারা।”
এ ঘটনা ঘিরে এলাকায় চরম ক্ষোভ ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
তেরখাদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, “অপহরণ হয়েছে বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট এলাকায়, গুলি করা হয়েছে খুলনা সদর এলাকায়। তাই মামলা করতে হবে সংশ্লিষ্ট থানায়। আমরা তদন্তে সহযোগিতা করব এবং যারা দায়ী, তাদের আইনের আওতায় আনা দরকার।”
এ ঘটনায় অভিযুক্ত রাতুল, রাসেল শেখ ও সাব্বির মোল্লার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
খুলনা গেজেট/এনএম